মাহাথির মোহাম্মদ: এক শতাব্দীর নেতা ও যুগান্তকারী ১০ পদক্ষেপ

মেন্টর আসিফ

১১.০৭.২৫

তুন মাহাথির মোহাম্মদ, মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী, এক শতাব্দীর জীবন পেরিয়ে গেলেও তার অবদান আজও বর্তমান। একজন চিকিৎসক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা মাহাথির দেশের আধুনিকায়নে এক অপরিহার্য নাম। নিচে তার ১০টি যুগান্তকারী পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো, যা মালয়েশিয়াকে এক উন্নয়নশীল দেশ থেকে উদীয়মান অর্থনীতির দিকে এগিয়ে দেয়।

১. লুক ইস্ট পলিসি (Look East Policy)

১৯৮২ সালে মাহাথির জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও উদ্ভাবনী মনোভাব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই নীতি চালু করেন। এটি মালয়েশিয়ার শিল্পায়ন ও পেশাগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. ভিশন ২০২০ (Vision 2020)

১৯৯১ সালে ঘোষিত এই মহৎ লক্ষ্য ছিল মালয়েশিয়াকে ২০২০ সালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এটি মালয়েশিয়ানদের জন্য একটি জাতীয় স্বপ্ন ও উন্নয়নের দিকনির্দেশনা হয়ে দাঁড়ায়।

৩. প্রোটন গাড়ি প্রকল্প

মাহাথির জাতীয় গাড়ি ব্র্যান্ড "Proton" চালু করে মালয়েশিয়ার শিল্প খাতে স্থানীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের সূচনা করেন। এটি দেশীয় উৎপাদন ও প্রকৌশলের বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে।

৪. পুত্রজায়া প্রশাসনিক রাজধানী নির্মাণ

তিনি কুয়ালালামপুরের উপর চাপ কমাতে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আধুনিক ও কেন্দ্রীভূত করতে পুত্রজায়া গড়ে তোলেন – এটি পরিকল্পিত, স্মার্ট শহরের প্রতীক।

৫. মালয়েশিয়া মাল্টিমিডিয়া সুপার করিডোর (MSC)

ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাহাথির ১৯৯৬ সালে MSC চালু করেন। এটি দেশকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্বে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৬. পেনাসুলা লিংক এবং মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর সেতু উন্নয়ন

তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ সংযোগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করতে মহাসড়ক, রেললাইন ও সেতু উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করেন, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

৭. আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব

ওআইসি ও NAM-এর মাধ্যমে মাহাথির বিশ্বমঞ্চে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে জোরালো বক্তব্য রাখেন এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে তার সাহসী অবস্থান পরিচিতি পায়।

৮. সাহসী আর্থিক নীতিমালা ও IMF প্রত্যাখ্যান

১৯৯৭ সালের এশিয়ান আর্থিক সংকট চলাকালে তিনি IMF-এর কঠোর শর্ত প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব মুদ্রানীতির মাধ্যমে সংকট সামাল দেন, যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়।

৯. শিক্ষায় রূপান্তর

তিনি প্রযুক্তিনির্ভর ও ইংরেজিভিত্তিক শিক্ষা চালু করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান কেন্দ্র ও পলিটেকনিক সম্প্রসারণ করেন, যার ফলে দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে ওঠে।

১০. দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান

২০১৮ সালে ৯২ বছর বয়সে ফিরে এসে তিনি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালান, বিশেষ করে 1MDB কেলেঙ্কারি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

উপসংহার

মাহাথির মোহাম্মদের ১০০ বছর শুধুই বয়সের পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি এক সাহসী, দূরদর্শী এবং উন্নয়ননির্ভর নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি মালয়েশিয়াকে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তার স্থায়ী প্রভাব শুধু মালয়েশিয়াতেই নয়, বরং গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আগামী প্রজন্মের জন্য তার জীবন ও কাজ এক শিক্ষণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

মেন্টর আসিফ একজন পথপ্রদর্শক ও গাইড,ভিশনারি শিক্ষাবিদ এবং সামাজিক সংস্কার স্ট্রাটিজিস্ট , যিনি শিক্ষা, ক্ষমতায়ন এবং জাতি গঠনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন। তিনি জটিল ধারণাগুলিকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, মানুষের নিজের ওপর বিশ্বাস জাগাতে পারেন এবং অর্থপূর্ণ ভাবনাগুলিকে বাস্তব কাজে রূপ দিতে পারে।